দক্ষিন কোরিয়াতে রুম মেট হিসাবে করণীয় ও বর্জনীয়

দক্ষিন কোরিয়াতে রুম মেট হিসাবে করণীয় ও বর্জনীয়


রুমমেট হিসাবে করণীয় বর্জনীয়।

১. লাইট :
আপনার রুমমেট যখন ঘুমাবে, তখন আপনি রুমের লাইট জ্বালাবেন না। এক্ষেত্রে আপনার প্রয়োজন হলে ব্যক্তিগত টেবিল ল্যাম্প ব্যবহার করুন।

২. কথা বলা :
আপনার বাড়িতে/ আত্মীয় স্বজনের সাথে মোবাইলে কথা বলার সময় লক্ষ্য রাখবেন আপনার রুমমেটের ঘুমের/পড়ার যেন কোন ক্ষতি না হয়। বেশি রাতে কথা বলার প্রয়োজন হলে রুমের বাইরে গিয়ে কথা বলুন।

৩. আড্ডা :
আপনার রুমমেট ঘুমাচ্ছে কিংবা পড়ছে এমন সময়, আপনি আপনার বন্ধুদের নিয়ে রুমে আড্ডা না দেওয়ার চেষ্টা করুন।

৪.গান শোনা :
গান শোনা আপনার খুব পছন্দ। এমনকি গান না শুনলে আপনার ঘুম হয় না! এক্ষেত্রে আপনি হেডফোন/ ইয়ারফোন ব্যবহার করুন।

৫. ব্যক্তিগত বিষয় :
আপনার রুমমেটের ব্যক্তিগত কোন বিষয়ে নাক গলাতে যাবেন না। এতে সে বিব্রতবোধ করতে পারে। এমনকি রুমমেট কে না বলে তার কোন জিনিস ব্যবহার করা অনুচিত। হোক সেটা স্যান্ডেল, সাবান, টুথপেষ্ট, বডি স্প্রে,লোশন, তোয়ালে তো অবশ্যই না।

৬. শব্দ :
দরজা/জানালা লাগানোর সময় সতর্ক থাকুন যেন জোরে কোন শব্দ না হয়। এতে আপনার রুমমেটের পড়ায়/ঘুমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।

৭. খাওয়া :
খাওয়ার সময় কথা না বলার চেষ্টা করুন। খাওয়ার সময় অনেকের মুখ থেকে এক ধরনের শব্দ বের হয়। যা আপনার রুমমেটের জন্য বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

৮. ব্রাশ কর :
হেটে হেটে বা অন্যের রুমে গিয়ে ব্রাশ করার অভ্যাস থাকলে তা পরিহার করুন।

৯.কাপড়-চোপড় :
আপনার কাপড়চোপড় শুকাতে দেয়ার সময় খেয়াল রাখবেন অন্যের রুমের দরজার সামনের দড়িতে আপনার আন্ডার গার্মেন্টস বা কাপড় যেন না দেন। রুম থেকে বের হলেই যেন তার নাকে আপনার ভেজা কাপড় না লাগে।

১০.শ্রদ্ধেয় বড়ো ভাই ও স্নেহের ছোটো ভাইঃ-
-বয়সে যে ছোটো সে বড়োকে আগে সালাম দিবেন, যে পাহাড়/সিঁড়ি থেকে নামবে সে আগে সালাম দিবে যে উপরে উঠবে তাকে-(আল-হাদিস)

  • যে আগে সালাম দিবে সে ১০০ নেকী পাবে আর যে সালামের উত্তর দিবে সে ৯০ নেকি পাইবে(আল-হাদিস)
    -যে আগে সালাম দিবে সে অহংকার মুক্ত – হযরত আলী রাঃ।
    -কেউ কাউকে “তুই” শব্দ ব্যাবহার করতে পারবে না। সিনিয়রকে “আপনি” বলবেন আর জুনিয়রকে আপনি না বলতে পারলে বেশি জুনিয়র হলে বড়োজোর তুমি বলবেন। তবে অফিস ল্যাঙ্গুয়েজ আপনি হওয়া উচিৎ।

১১. যে রান্না করতে জানেনা,সে সিনিয়দের কাছ থেকে রান্না শিখবে ছয় মাসের ভিতরে। বড়ো ভাইয়েরা রান্না শেখাবে। ছয় মাস পরে রোটেশনে রান্না হবে৷ সপ্তাহ কিংবা মাস হিসাব করে। এভাবে রুম পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখবেন। একচেটিয়া ছোটো ভাই কিংবা বড়ো ভাই কারোর উপর নিয়মিত রান্নার দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়া যাবে না।

১২. বিড়ি সিগারেট, ছুল খাওয়ার অভ্যাস যাদের আছে তারা সম্ভব হলে একটা নির্দিষ্ট রুমে কিংবা আলাদা জায়গায় খাবেন। যারা স্মোক করেন না তাদের আলাদা রুমে দেন, যারা স্মোক করেন তারা এক রুমে থাকার চেস্টা করুন। মনে রাখবেন প্যাসিভ স্মোকাররাও স্মোকারদের মতো সেইম ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

১৩. যারা নামাজ পড়েন তারা সম্ভব হলে একটা নির্দিষ্ট রুমে থাকুন। নামাজীদের রুমে যেয়ে বিড়ি টানবেন না।

১৪. বিবাহিত-অবিবাহিতঃ- যারা বিবাহিত তারা এক রুমে, অবিবাহিতদের আলাদা রুমে দেয়ার চেষ্টা করবেন সুযোগ থাকলে। কেননা বিবাহিতদের কথোপকথনে অবিহিতদের কান বেশি খাড়া থাকে অনেকটা খুদার্ত বেড়ালের নাকে শুটকি ভর্তার ঘ্রাণের মতো।

১৫. কর্মক্ষেত্রেঃ- শিক্ষিত-অশিক্ষিত বিষয় না। কর্মক্ষেত্রে সবাই সেইম,সেইম বেতন,সেইম সুযোগ সুবিধার অধিকারী। পুরাতনরা নতুনদের কাজ শেখাবে অত্যান্ত ধর্যের সহিত মাধুর্য ভাষায়। নতুনরা খুব মনোযোগ সহকারে কাজ শিখবেন। নতুনরা যতো দ্রুত কাজ ও ভাষা আয়ত্ব করবেন মালিকের কাছে তাদের গুরুত্ব ও গ্রহণযোগ্যতা ততো বাড়বে। তখন মালিক পুরাতন বা যাদের ভিসা কম তাদের চেয়ে নতুনদের মূল্যায়ন বেশি করবে।
পুরাতনরা মনে রাখবেন, এই ফ্যাক্টরী আপনার বাবার না, আপনি সাজাংনিম আদুল না। নতুনদের কাজ শেখাতে গিয়ে এমন বাজে ব্যাবহার করবেন না, যা তার কাজে মনোযোগ নষ্ট হয়,সারাদিন কাজের চেয়ে আপনার ব্যাবহার মাথায় বেশি ঘুরপাক খায়। ভিসা শেষ হলে মালিক আপনাকে চিনবে না। কিন্তু ঐ বাজে ব্যবহারটা সারাজীবন মনে রাখবে নতুনরা।
So, Try build rapport and maintain Organisation culture. Management is easy but we make it typical, difficult, rough and tough .
১৬. গোপনীয়তা রক্ষা :
রুমমেটের গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে। কারণ ফ্যামিলির পর রুমমেটই একমাত্র ব্যক্তি যে সবকিছু খুব কাছ থেকে দেখতে পাই। নিজেদের পারস্পরিক সম্পর্ক নষ্ট হয় এমন কাজ থেকে বিরত থাকুন। যেমন,ঘুমান্ত অবস্থায় লুঙ্গী সরে গেলে সেটা পারলে ঠিক করে দেন,বিষয়টা অন্যের সাথে শেয়ার করবেন না।

১৭. ফোন কল পিক করা:
আপনার রুমমেট মোবাইলের কাছে নেই কিন্তু তার মোবাইলে পরিচিত বা অপরিচিত কেউ কল দিয়েই যাচ্ছে সেই মুহূর্তে আপনি তার ফোন পিক করবেন না। কারণ ফোন কলটি তার স্ত্রী, প্রিয়তমা, জান পাখি, সোনাপাখিরও হতে পারে, হতে পারে তার মা কিংবা বোনদেরও। আপনি গাইরে মাহরাম হয়ে ভিডিও কল রিসিভ করলে তাদের পর্দা নষ্ট হতে পারে,এমন কি রুমমেটের স্ত্রীর বুকে ওড়না নাও থাকতে পারে। স্ত্রী তো জানেন না অন্য কোউ তার ভিডিও কল পিক করবে। এমতাবস্থায় স্ত্রী বিব্রতবোধ করতে পারে। ভিডিও কল দিলেই তড়িঘড়ি করে অন্যের বউয়ের ভিডিও কল রিসিভ করার হীনব্যাক্তিত্ব পরিহার করুন। অডিও কলও পিক করবেন না। জানেন কি মেয়েলোকের কন্ঠও পর্দার অংশ? কন্ঠ শুনেও মেয়েলোকের বয়স,মোটা না চিকুন আনুমান করা যায়। রুমমেটের সামনে বউয়ের সাথে লাউড স্পিকারে কথা বলার বদ অভ্যাস পরিহার করুন। আপনার বউয়ের সেক্সি কণ্ঠে মজার মজার কথা রুমমেটকে না শুনানো আপনার জন্য কল্যাণকর।
পরামর্শ: রুমমেটের অনুপস্থিতে তার বউ কল দিলে সাইলেন্ট মুড করে রাখুন এবং তিনি রুমে আসলে সাথে সাথে জানাবেন। যদি তার আসতে দেরী হয় আর তিনি যদি বিরতীহীনভাবে চার পাঁচ বার কল দিতেই থাকে তাহলে বুঝবেন ভাবির বাতিক আছে,ধর্য কম কিংবা অল্পতেই মনের কোনে ভ্রান্ত চিন্তার জন্ম দেয় এবং দুশ্চিন্তা গ্রস্থ্য হয়ে পরেন। তাহলে তাকে একটা অডিও মেসেজ দিয়ে রাখতে পারেন ” আসসালামুয়ালাইকুম, কেমন আছেন? উনি একটু বাহিরে গেছেন, ভুলে মোবাইল রেখে গেছেন। আসলেই আপনাকে কল দিতে বলবো ইনশাআল্লাহ, রাখি”। অন্যের বউয়ের কল পিক করে গল্প করতে যাইয়েন না, সুন্দর কন্ঠ আর রুপ লাবণ্যের প্রশংসা করতে যাইবেন না যদি ভালো রুমমেট হতে চান। রুমমেট ফোনে কার সাথে কি প্রসঙ্গে কথা বলে তা আঁড়ি পেতে শুনবেন না।

১৮. রুমমেট অসুস্থতাঃ রুমমেট অসুস্থ হলে তার দেখা শুনা করা অন্য রুমমেটের নৈতিক,মানবিক,ধর্মীয় দায়ীত্ব। সব কিছু ভুলে তাকে সেবা দেন। প্রয়োজন হলে হসপিটালে নিয়ে যান। সব রুমমেটের উচিৎ তার দেশের জুরুরী নাম্বার কোন পুরুষের মোবাইল নং শেয়ার করা। বিপদ হলে সেই সবাইকে জানাবে। ফেসবুকে যেন এমন পোস্ট দিয়ে দেশের বাড়ি আত্বীয়ের নাম্বার খোজা না লাগে।

১৯.রিলিজ থাকা ভাইদের ব্যাপারেঃ-
কোন ভাই রিলিজে থাকলে তাকে থাকার ব্যাবস্থা করা মসজিদ, মুসল্লা, শেল্টারে থাকার ব্যাপারে সাহায্য করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ধর্ম টানা বকধার্মিকতা মনে করি। কোন ভাইয়ের ফ্যাক্টরীতে লোক লাগলে তাকে নেয়ার চেষ্টা করুন, সেক্ষেত্রে আমি হিন্দু/আমি মুসলিম এই হীনমানসিকতা পরিহার করুন। ধর্মের কারণে রিজেক্ট করা ভাইদের চিন্তা করা উচিৎ কোরিয়ানরা ধর্মীয় বিবেচনায় কারো ভিসা ইস্যু করেনি। যদি করতো তাহলে মুসলমানদের আনতো না,কারণ আমাকে নামাজ পড়তে দিতে হয়,মদ খাইনা,মাংস খাই না,ওদের কালচারে মিশতে পারিনা। আমাদের নিয়ে ওরা বিপাকে। Humanity first,religious then. এই মৃত্যুময় তুষারে আমি মন্দিরে/মসজিদে আশ্রয় চাইলাম আপনি ধর্মের কারণে তাড়িয়ে দিলেন, এটা কোন কিতাবে আছে?

২০.রুম পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করাঃ-
আপনার পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা প্রমাণ করবে আপনি কোন পরিবেশে বেড়ে উঠেছেন। আপনার রুচিবোধ আপনার ব্যক্তিত্বের মাপকাঠি। রান্নাঘর,গোসলখানা পরিস্কারের সিডিউল অনুযায়ী পরিস্কার করবেন। কারো রান্না করা খাবার না জানিয়ে খাবেন না, তরকারির পাতিলে হাত দিবেন না,খাওয়ার পরে অবশ্যই বলবেন সেটা খেয়েছেন। আপনার রুমমেটের রুচিবোধ,পছন্দ,অপছন্দ সম্পর্কে আপনাকে অবগত হতে হবে। শুধু রুম নয় দিল/অন্তর/হার্ট মনটাও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখবেন পাশাপাশি।

সর্বোপরি, সম্পর্কের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। তবুও এমন কিছু না করার চেষ্টা করুন, যেটাতে আপনার রুমমেট বিরক্তবোধ করেন।
সকল প্রবাসী ও স্টুডেন্ট যারা মেস কিংবা হোষ্টেলে থাকেন তাদের স্বার্থে এই লেখাটি।
শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

By
মিজানুর রহমান,
E-9 Visa(Labour/Blue coller job Holder)
BA(Pass Course) BA(Hon’s),MA, LLB, CEMBA