যারা সরকারি ভাবে বোয়েসেলের মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়া যেতে চান পোস্টটি শুধুমাত্র তাদের জন্য!
🧿EPS(Employment Permit System) একটি লম্বা সময়ের প্রক্রিয়া। এর অনেকগুলো ধাপ রয়েছে। প্রতিটি ধাপেই রয়েছে অনিশ্চয়তা। প্রথম সময়ে যে নিয়ম কানুন ছিল তা বর্তমানে অনেকখানি পরিবর্তন করা হয়েছে। বর্তমানে যে নিয়ম কানুন আছে ভবিষ্যতে হয়তোবা পরিবর্তন করা হবে। কিন্তু মূল শর্ত ও প্রক্রিয়াগুলো তেমনই আছে। নিম্নে সংক্ষিপ্ত আকারে যথাসম্ভব প্রতিটি ধাপ বর্ণনা করার চেষ্টা করছি।
⭕১ম ধাপঃ
EPS ভিসার প্রথম ও প্রধান শর্ত হল, কোরিয়ান ভাষার উপর দক্ষতা থাকা। এই ভাষা যে কোন ভাবেই শিখতে পারেন। নিজে নিজে অথবা সরকার স্বীকৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অথবা বিভিন্ন কোচিং সেন্টার কিংবা প্রাইভেটে ইত্যাদি ভাবে। ভাষার উপর পরীক্ষা দুইভাবে হয়। ১) রিডিং ২) লিসেনিং
⭕২য় ধাপঃ
ভাষা শিক্ষার পর আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে সার্কুলারের। সার্কুলার BOESL (Bangladesh Overseas Employment & Services Ltd) এর মাধ্যমে বিভিন্ন পত্রিকাতে ও বোয়েসেল ওয়েবসাইটে পাবলিশ হবে । সার্কুলার হলে আপনাকে প্রাইমারী ভাবে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। অনলাইনে রেজিস্ট্রাশন করতে হলে কি কি যোগ্যতা থাকতে হবে তা স্পষ্ট করে সার্কুলারে লিখা থাকবে। তবে আপাতত জানার সেটা হলো বয়স :১৮-৩৯ এর ভিতরে ও এস এস সি সমমান সার্টিফিকেট এবং ডিজিটাল/ই-পাসপোর্ট, রেজিস্ট্রেশন কোথায় করবেন :- কম্পিউটার হলে নিজেই করা যায় আবার এন্ড্রেয়েড ফোন দিয়েও হয়। না পারলে যেকোনো কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন সম্পূর্ন করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন সম্পূর্ণ হলে আপনাকে কনফার্মেশন একটা প্রিন্ট কপি দেওয়া হবে। যা আপনাকে সংরক্ষণ করতে হবে। মানে নিজের কাছে রেখে দিতে হবে।
⭕৩য় ধাপঃ
লটারি যদি চাহিদার চেয়ে অনেক বেশী রেজিস্ট্রেশন হয়। তখন সমস্ত রেজিস্ট্রেশন থেকে কোটা সমপরিমান লোক লটারির মাধ্যমে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়ে থাকে। এই লটারিতে অনেকে ভাষা না জানা ব্যাক্তিরা চান্স পেয়ে যায় আবার ঠিক তেমনি ভাষার উপর ভালোভাবে পড়াশুনা করা দক্ষ ব্যাক্তিরাও বাদ পড়ে যায়। এটি সম্পূর্ণ কম্পিউটারাইজড সিলেকশন, সুতরাং আপনার বা অন্য কারো ক্ষমতা থাকে না। [[এক কথায় ভাগ্য]]
⭕৪র্থ ধাপঃ
আপনি লটারির মাধ্যমে সিলেকশনের পর সব ধরণের কাগজপত্র একত্রিত করে আপনাকে স্বশরীরে বোয়েসেল গিয়ে মূল রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এই রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত সিরিয়াল নম্বর আপনাকে সবসময় সংরক্ষণ করতে হবে। এডমিট কার্ড সংগ্রহ করা, টাকা পে-অর্ডার করা। সবকিছু ঠিকঠাক করে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।
⭕৫ম ধাপঃ
CBT (Computer Based Test) পরীক্ষা হবে। কম্পিউটারের সামনে বসে রিডিং ও লিসেনিং একসাথে পরীক্ষা দিতে হবে। পরিক্ষার শেষে নিজে যে কম্পিউটারে বসে পরিক্ষা দিলেন সেই কম্পিউটারেই নিজের প্রাপ্ত নম্বর জানা যাবে।[একদম পরিক্ষা শেষে] তাই একটু বসে থাকতে হবে। পরীক্ষা অপেক্ষাকৃত ভালো হলে পরবর্তী ধাপে এগুতে হবে।
⭕৬ষ্ঠ ধাপঃ
ভাষা পরীক্ষার পর স্কীল টেস্ট নামে আরও একটি পরীক্ষা হবে। স্কিল টেস্ট কেমন ও কিভাবে হবে তা অভিজ্ঞ ইন্সট্রাক্টরের কাছ থেকে জেনে নিতে হবে। সময়ের সাথে সাথে নিয়ম পরিবর্তন হয়েছে, হয়তো আরও হবে। এবং এ পরীক্ষায় বেশী মার্ক পাওয়ার জন্য কাজের অভিজ্ঞতা ও ছয় (৬) মাসের অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ ভোকেশনাল সার্টিফিকেট অথবা পলিটেকনিক সার্টিফিকেট থাকলে ভালো তবে আবশ্যক নয়।
⭕৭ম ধাপঃ
সব পরীক্ষায় পাশ করার পর PRS (Point Recruiting System) এর মাধ্যমে কোটা সমপরিমান লোক রেখে বাকিদের ডিলেট করে দেওয়া হবে। অর্থাৎ যারা পয়েন্টে এগিয়ে থাকবে মানে যারা বেশি নাম্বার পাবে তারা কোটাতে চান্স পাবে এবং বাকিরা বাদ পড়ে যাবে। সুতরাং দুইশোতে 150 পেয়েও বাদ পরার আশাংকা রয়েছে অপরদিকে দুইশোতে 100 পেয়েও টিকে যেতে পারে।[2020 এ পাশ মার্ক ছিলো 100। টিকানো হয়েছে 135 মার্কে]
⭕৮ম ধাপঃ
উত্তির্ন মানে আপনি টিকে যাবার পর আপনাকে নোটিশের মাধ্যমে জানানো হবে। তারপর আপনাকে আপনার পাসপোর্টে উল্লেখিত স্থায়ী ঠিকানায় সিভিল সার্জন কর্তৃক মেডিক্যাল চেকআপ করে মেডিক্যাল সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে হবে এবং জব ফর্ম পূরন করে বোয়েসেল গিয়ে জমা দিতে হবে। সাথে কি কি নিয়ে যেতে হবে বোয়েসেল সব নোটিশে বলে দিবে। [ জব ফর্ম, মেডিক্যাল চেক আপ লিষ্ট, মেডিক্যাল চেক আপ ফর্ম বোয়েসেল প্রধান করবে]
⭕৯ম ধাপঃ
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আপনাকে রোস্টারভুক্ত করা হবে, এবং আপনি www.eps.go.kr এ ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখতে পাবেন। এখানে একটা আইডি খোলার পর আপনার সব ইনফরমেশন আপনার ঔ আইডিতে পাওয়া যাবে। আপনার কাজ হবে কিছুদিন পর পর আইডি তে ঢুকে খোজ খবর নেওয়া। এরপর কোরিয়ান কোন কম্পানির মালিকের উপর নির্ভর করবে আপনার ভিসা হবে কি হবেনা, আপনার ছবি, বয়স, বায়োডাটা দেখে মালিক পছন্দ করার পর আপনার ভিসা ইস্যু হবে এবং HRD Korea এর মাধ্যমে BOESL কে জানিয়ে দিবে। বোয়েসেল কর্তৃপক্ষ মোবাইল, ম্যসেজ বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে আপনাকে জানিয়ে দিবে। সব ঠিক ঠাক থাকলেও কোরিয়ান কম্পানির কোন মালিক যদি আপনাকে পছন্দ না করে তাহলে আপনার কোরিয়া আসা হবেনা, উদাহরন স্বরুপ: আমরা বাংলাদেশেও যদি কোন চাকুরির ইন্টার্ভিউ দেই সব প্রশ্নের উওর যদি ঠিক ঠাক দেই তাও চাকরি না হলে কিছু কি করার থাকবে/থাকে…? মানে ইন্টারভিউওলা কোন কারনে আমাকে পছন্দ করেনি বা এক কথায় আমার ভাগ্যে চাকুরিটি ছিলনা, শুধু ভাগ্য বা আল্লাহ্র হুকুম থাকলেই কোরিয়া আসতে পারবেন।তাই সদা-সর্বদা নামাজ পড়েবেন, অন্যান্য ধর্মের যারা তারা তাদের ধর্ম পালন করবে, পরিবার ও অন্যান্য সবার সাথে ভালো ব্যবহার ও ভালো কাজ করবেন।
⭕১০ম ধাপঃ
আপনাকে জানানোর পরে অর্থাৎ CCVI কনফার্ম হওয়ার পর আপনাকে দুই সপ্তাহব্যাপী একটা ট্রেনিং দেওয়া হবে। এরমধ্যে ফ্লাইট ডেট কনফার্ম করতে হবে। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট করতে হবে। ফিঙ্গার প্রিন্ট করতে হবে এবং কোরিয়ান মালিক প্রদত্ত কন্টাক্ট পেপার ও সাইন করতে হবে।
⭕১১তম ধাপঃ
কোরিয়া আসার পূর্বে বোয়েসেল অফিসে একটা ব্রিফিং দেওয়া হবে। ক্যাপ ও টুপি বোয়েসেল কর্তৃপক্ষ আপনাকে প্রদান করবে এবং ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে চুক্তিনামা সাক্ষর করতে হবে। এবং নির্দিষ্ট দিনে কোরিয়া গমন করতে হবে।
⭕১২তম ধাপঃ
কোরিয়া আসার পর আপনাকে KBiz Center এ আরেক দফা ট্রেনিং করতে হবে এরপর মালিক এসে আপনাকে নিয়ে যাবে। ব্যাস আপনি এখন EPS এর গর্বিত একজন সদস্য।
🔻🔻🔻🔻প্রয়োজনীয় কিছু তথ্যঃ🔻🔻🔻🔻
১। পাসপোর্ট,সার্টিফিকেট(ssc), ভোটার আইডি এবং অন্যান্য সকল কাজগপত্রে আপনার নাম, ঠিকানা, বাবার নাম ও জন্ম তারিখ হুবহু থাকতে হবে। কোন প্রকার সমস্যা থাকলে আগেই ঠিক করে নিবেন। এই কারণে আপনি বাদও পরতে পারেন।
২। এই EPS এর প্রক্রিয়া চলাকালীন সময়ে আপনার পড়াশুনা, ব্যাবসা বাণিজ্য ও চাকুরী নিয়মিত করতে থাকবেন। কারণ প্রতিটি ধাপেই রয়েছে অনিশ্চয়তা। যে কোন কারণে, অল্প কারণে কিংবা বিনা কারনেই আপনি বাদ পরতে পারেন। এটি অনেকটা ভাগ্যের উপর নির্ভর করে। কোরিয়াতে যেতেই হবে বা কোরিয়াতেই যাব, এমন মনোভাব থেকে দূরে থাকা ভালো।
৩। EPS এর প্রক্রিয়ার কোন ধাপেই নগদ অর্থের প্রয়োজন হয়না। ভিসা ইস্যূর পরে প্লেনের টিকিট নিজে কাটতে হয় এবং সমস্ত খরচ পে-অর্ডারের মাধ্যমে জমা দিতে হয়।
৪। EPS এর সমস্ত প্রক্রিয়ার নিয়মাবলী পরিবর্তনযোগ্য। সুতরাং সময়ের সাথে সাথে সবসময় আপডেট বা পরিবর্তন হতে পারে।